রমজান পরবর্তী আমল
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। নির্ধারিত সময় মানুষ দুনিয়াতে অবস্থান করবে। এ সময়টি পরকালের শস্যক্ষেত্র। যারা এখানে ভালো কাজ করবে; তারাই ভালো ফল পাবে। আর যারা মন্দ কাজ করবে তারাও এর প্রতিফল পাবে।
মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে মহান আল্লাহ প্রতি সপ্তাহে কিছু নির্ধারিত মর্যাদার দিন রেখেছেন আবার মাসে নির্ধারিত কিছু দিন রেখেছেন আবার বছরের বিভিন্ন সময়ে রেখেছেন বিশেষ কিছু নির্ধারিত দিন ও সময়। এর মধ্যে রমজান মাসও একটি। এ মাসের আমলগুলো নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে পারলে বছরজুড়ে পাওয়া যাবে রহমত বরকত মাগফিরাত ও নাজাত।
রমজানের এই দিনগুলোতে মানুষ অনেক নেক কাজ করেছেন। সেগুলোকে নিজেদের জীবনে স্থায়ী রূপ দান করতে হবে। যদি এমনটি করা যায়, তবে এই রমজান আমাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম কারণও হবে। কেননা, হাদিসে পাকে এ প্রসঙ্গেই সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে- নবীজি সা: বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো মুছে দেয়, যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে’ (মুসলিম)।
সুতরাং প্রতি সপ্তাহ, মাস ও বছরের আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলা খুবই জরুরি। এ ছাড়া মানুষের মৃত্যুর পর যেন সওয়াবের পথ বন্ধ হয়ে না যায়; সে জন্য বিশেষ তিনটি আমল অব্যাহত রাখা।
এ জন্য সপ্তাহ, মাস ও বছর হিসাব করার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনই বিশেষ তিনটি আমল করা জরুরি। হাদিসে এসেছে-
নবীজি সা: বলেছেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তিনটি আমল ছাড়া সব রকমের আমলই বন্ধ হয়ে যায়। তাহলো- ১. সদকায়ে জারিয়া; ২. উপকারী ইলম বা জ্ঞান ও ৩. এমন নেক সন্তান, যে তার (মৃত্যুর পর তার) জন্য দোয়া করতে থাকে’ (মুসলিম)।
সদকায়ে জারিয়া: যার অর্থ এমন ধরনের জনকল্যাণকর কাজে ব্যয় হয়, যার সুফল বহু দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। মানুষ এ কাজে উপকার পেয়ে থাকে। যেমন- পুকুর কাটা, কূপ খনন করা বা পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করা, মুসাফিরদের জন্য সরাইখানা তৈরি করা, রাস্তার পাশে ছায়াদানকারী বৃক্ষ রোপণ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করে যাওয়া, রাস্তাঘাট নির্মাণ বা ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করা।
উপকারী জ্ঞান: এমন জ্ঞানমূলক বই-পুস্তক লেখা, যার মাধ্যমে লোকেরা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করবে। কল্যাণের পথে পরিচালিত হবে। দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় জ্ঞান লাভে জীবন সাজাতে পারবে। কিংবা মৃতব্যক্তি কাউকে এমন কিছু শেখায় যে তার ফলেও সে প্রতিদান পেতে থাকবে।
নেক সন্তান: তৃতীয় যে কাজটির জন্য মৃত্যুর পরও সে প্রতিদান পেতে থাকবে তা হলো তার নেক সন্তান, যাকে সে প্রথম থেকেই সুশিক্ষা দিয়েছে এবং তার চেষ্টার ফলেই সে আল্লাহভীরু ও দ্বীনদার হতে পেরেছে। যতদিন পর্যন্ত এমন নেক সন্তান দুনিয়ায় জীবিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত তার কৃত সৎকাজের সওয়াব সেও পেতে থাকবে। এমনকি সে সন্তান বাবা-মায়ের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে বলবে- উচ্চারণ : রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৪)। অর্থ : হে আমার প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’
সুতরাং আমাদের রমজানের আমলগুলো যেন এমন হয় যে, রমজান পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে জীবন পরিচালনায় সহায়ক হয়। এমনকি মৃত্যুর পরও যেন তা আমাদের জন্য সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়।
বছরজুড়ে এ কাজগুলোও করা যেতে পারে-
১. নিয়মিত বাবা-মায়ের সেবা করা।
২. প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেয়া।
৩. অসহায় মানুষের ঘরে ঈদ উপহার ও পরবর্তী সময় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া।
৪. বিপদ-আপদে অন্যের পাশে দাঁড়ানো।
৫. অহঙ্কার-দম্ভ পরিহার করা।
৬. পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা।
৭. লেনদেনে সততা অবলম্বন করা।
৮. অন্যের সম্পদ দখল করা থেকে বিরত থাকা।
৯. কখনো মিথ্যা কথা না বলা।
লেখক: ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি