
৮ বছর পর স্থায়ী ক্যাম্পাস পাচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাস পায়নি দেশের ৪০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি।
স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ২০১৮ সালে প্রকল্প প্রস্তাব করা হলেও বারবার সংশোধন আর পুনর্গঠনের গোলকধাঁধায় আটকে ছিল সেই প্রস্তাব।
তবে অবশেষে সেই গোলকাধাঁধা থেকে মুক্তি পাচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে একনেক সভায়। বহুল প্রতিক্ষীত স্থায়ী ক্যাম্পাসের খবরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চলতি অর্থবছরের ১০ম সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপার্সন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সভায় অনুমোদনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হবে।
এর আগে একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য যাচাই বাছাই শেষে প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশন। যদিও এর আগে পরিকল্পনা কমিশন থেকে সংশোধন এবং পুনর্গঠনের কথা বলে ৮বার ফেরত দেওয়া হয় প্রকল্প প্রস্তাবটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া ‘‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি চলতি বছরের মে মাসে শুরু হবে। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও অফিস কক্ষের সংকট দিন দিন বেড়েই চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ না করা গেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি উচ্চশিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো এবং অন্যান্য সহায়ক সুবিধা সম্প্রসারণে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপনের উদ্দেশ্যে আলোচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই প্রকল্প প্রস্তাবের অনুমোদন মেলেনি। বিশাল বাজেটের প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে ব্যয় কমানোর জন্য সংশোধনের সুপারিশসহ ৮ বার ফেরত পাঠানো হয়। এতে বারবার পুনর্গঠন আর সংশোধনের গোলকধাঁধায় আটকে থাকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পটি। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারিতে ৯ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখান থেকেও ৮০ কোটি টাকা কমিয়ে অনুমোদনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন।
এদিকে, প্রতিষ্ঠার আট বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি থেকে টানা আন্দোলন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব ক্যাম্পাসের দাবিতে তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলন করেন স্থানীয় ছাত্র-জনতাও। শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি দাবি মানতে আলটিমেটামও দেয় শিক্ষার্থীরা।
অবশেষে বহুল প্রতিক্ষীত স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উত্থাপনের খবরে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী এবং কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উঠছে। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। কারণ প্রতিষ্ঠার আট বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ শুরু করা যাবে, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হবে।
এদিকে, চলতি বছরের ১০ম একনেক সভায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও ৭টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা।
একনেক অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (৩য় সংশোধিত), নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও ক্ষতিকর আচরণ প্রতিরোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা, নারয়নগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত), গুলশান-বনানী -বারিধারা লেক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত), ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট, বি স্ট্রং এবং খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার সেচ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রকল্প।