
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা কর্মফল দিবসকে অবিশ্বাস করো’...অথচ তোমরা সেই দিনের দিকেই ধাবমান, তোমাদের সকল কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ সেদিন চূড়ান্ত করা হবে। তার মধ্যে থেকে কিছুই নষ্ট হবে না বা বিকৃত হবে না। তোমাদের ওপর প্রহরী নিযুক্ত রয়েছেন, তারা সম্মানিত লেখক, তোমরা যা-ই করো, তা তারা জানেন।’
এসব প্রহরী হচ্ছেন মানুষের তত্ত্বাবধান, সার্বক্ষণিক তদারক ও প্রতিটি কার্যকলাপ বা কথাবার্তাকে গুণে গুণে লিপিবদ্ধ করে রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত আল্লাহর ফেরেশতা। আমরা জানি না এই কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হয়। এটা জানা আমাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্তও নয়। এসব জিনিস জানা ও বুঝার ক্ষমতা ও যোগ্যতা যে আমাদের দেয়া হয়নি, সে কথিা আল্লাহ তায়ালাই জানেন। এসব বিষয় জানার মধ্যে আমাদের জন্য কোন কল্যাণ নিহিত নেই। কেননা এটা আমাদের কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্যেরও আওতাভুক্ত নয়।
কাজেই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অদৃশ্য বিষয়সমূহের মধ্য থেকে যেটুকু জানবার সুযোগ দিয়েছেন, তার অতিরিক্ত কোন কিছু জানতে চেষ্টা করা আমাদের জন্য অনাবশ্যক। মানুষের মনে শুধু এতটুকু সাবধানবাণী দিয়ে দেয়াকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে, তাকে যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা দেয়া হয়নি এবং তাকে বিনা জবাবদিহীতে ছেড়ে দেয়া হবে না। বরঞ্চ তার ওপর সম্মানিত লেখকদের প্রহরী নিয়োজিত করা হয়েছে, যারা তাদের প্রতিটি তৎপরতা সম্পর্কে ওয়াকেফহাল, যাতে সে জাগ্রত ও সতর্ক হয় এবং শিষ্টাচারী হয়। এটাই হচ্ছে এর উদ্দেশ্য।
লক্ষণীয় যে, গোটা সূরার পরিবেশ সম্মান ও মর্যাদার পরিবেশ, প্রহরীদের সাথে ‘সম্মানিত’বিশেষণটি যুক্ত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই যে, মানুষের মনে যেন এই সম্মানিত ফেরেশতাদের সামনে শোভনীয় ও ভদ্রচিত কাজ করার প্রেনণা এবং অশোভন কাজের বিরুদ্ধে লজ্জার অনুভূতি গড়ে ওঠে। বস্তুত এটা মানুষের স্বভাবজাত ব্যাপার যে, সম্মানিত ও মর্যাদাবান মানুষের সামনে কোন আজে বাজে বা অশোভন কাজ করতে সে লজ্জা অনুভব করে থাকে। মর্যাদাবান মানুষের সামনে যখন তার এ অবস্থা, তখন প্রতিটি মুহুর্তে একদল ‘মর্যাদাবান’তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতার সামনে থাকার অনুভূতি যার মধ্যে বিদ্যমান, তার কি অবস্থা হতে পারে, এটা সহজেই অনুমেয়। বিশেষত তারা যখন এমন ফেরেশতা, যারা মানুষের পক্ষ থেকে ভালো কাজ ও ভালো কথা ছাড়া আর কিছুই আশা করে না।
কোরআন মানুষের হৃদয় তার সহজাত প্রজ্ঞা ও উপলব্ধির অতি নিকটবর্তী এই ধ্যান-ধারণাকে জাগ্রত ও প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে তার হৃদয়ে সর্বোচ্চ মানের প্রেরণা সৃষ্টি করে।