ঢাকা   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

পাহাড়ি জমিতে ইরির উচ্চ ফলনশীল ধানের বিপ্লব, কৃষকের আস্থা বৃদ্ধি

পাহাড়ি জমিতে ইরির উচ্চ ফলনশীল ধানের বিপ্লব, কৃষকের আস্থা বৃদ্ধি

পাহাড়ি জমিতে ইরির উচ্চ ফলনশীল ধানের বিপ্লব, কৃষকের আস্থা বৃদ্ধি

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত ও চ্যালেঞ্জিং ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশে কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ধারাবাহিকতায়, বোরো ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ইরি ও এগ্রিবিজনেস এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল-এর যৌথ বাস্তবায়নে রাঙামাটির তিনটি উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল (উফশি) ধান জাতের হেড-টু-হেড প্রদর্শনী কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

রাঙামাটি সদর উপজেলার শুকরছড়ি বড়ো পারা গ্রামে, কাউখালী উপজেলার পশ্চিম লুঙ্গিপাড়া গ্রামে ও কাপ্তাই উপজেলার উত্তর বনগ্রামে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) তত্ত্বাবধানে  কম সময়ে অধিক ফলন ও রোগ-বালাইমুক্ত ইরি-এগ্রো প্রকল্পের প্রদর্শনী চাষের নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বোরো ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে  গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও  এগ্রিবিজনেস এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল-এর যৌথ বাস্তবায়নে রাঙামাটির কাপ্তাই, কাউখালী ও সদর উপজেলায় পরিচালিত হেড-টু-হেড প্রদর্শনীতে ধানে চাষে সফলতা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ২৯ এপ্রিল, ২ মে ও ৩ মে  ২০২৫ যথাক্রমে কাপ্তাইয়ের মাসুদুর রহমান, কাউখালীর থুইস্যাংমা মারমা ও রাঙামাটি সদরের নীল চন্দ্র চাকমার জমিতে প্রদর্শনী ভিত্তিক নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্রি ধান-৮৮ জাত সর্বোচ্চ ফলন (কাপ্তাইয়ে ৮.৪ টন/হেক্টর) দিয়ে কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগায়। অন্যান্য জাত যেমন ব্রি ধান-১০২, ১০০, ৭৪ ও ২৮ গড়ে ৫.২ থেকে ৭.৮ টনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফলন দেয়।

এই কার্যক্রমের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলে ইরি কেবলমাত্র ধান জাত উদ্ভাবন নয়, বরং বাস্তব চাষাবাদের মাঠপর্যায়ে কৃষকের সঙ্গে মেলবন্ধনের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করছে। কৃষকেরা জানান, ইরির এই প্রদর্শনী দেখে তারা প্রযুক্তি-বান্ধব ও রোগ-বালাই প্রতিরোধী জাতের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন এবং আগামী মৌসুমে বৃহৎ পরিসরে এই জাতগুলো চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেন। উল্লেখ্য, শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের Lead Specialist – Seed System & Product Management ড. মোহাম্মদ আশরাফুল হাবিব উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রদর্শনী কার্যক্রম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং জানান, “এই অঞ্চলে কৃষকদের চাহিদা বুঝে ধানের জাত নির্বাচন ও উন্নয়ন ইরির দীর্ঘমেয়াদি অগ্রাধিকার এবং এ ধরণের প্রদর্শনীই ভবিষ্যতের কার্যকরী প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম।

তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষকরা এখন আর পিছিয়ে নেই। ইরি উদ্ভাবিত জাতসমূহ মাঠপর্যায়ে সফলভাবে পরীক্ষা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাহাড়ি কৃষিকে নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে।”
স্থানীয় কৃষকরাও এ উদ্যোগে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কাপ্তাইয়ের কৃষক মাসুদুর রহমান বলেন, “ব্রি ধান-৮৮ চাষ করে আমি অভিভূত। এত ভালো ফলন আমি গত কয়েক মৌসুমে দেখিনি। আগামী মৌসুমে আমি আরও বেশি জমিতে এই জাত চাষ করবো।” একইভাবে, কাউখালীর কৃষক থুইস্যাংমা মারমা জানান, “এই জাত রোগবালাইমুক্ত, কম সময়ে ফসল পাওয়া যায়, এবং বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়।” রাঙামাটি সদরের কৃষক নীল চন্দ্র চাকমা বলেন, “ব্রি ধান-১০০ এবং ৮৮ আমার জমিতে অনেক ভালো ফলন দিয়েছে। আগে যেখানে লোকসানের ভয় ছিল, এখন সেখানে লাভের আশা তৈরি হয়েছে।”

এই প্রদর্শনী কার্যক্রম ইরির জন্য শুধুই একটি প্রযুক্তি প্রদর্শন নয়; এটি একটি জনগণ-ভিত্তিক কৃষি রূপান্তরের মডেল। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মতামত ও বাস্তব ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে জাত নির্বাচন, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং অভিযোজনযোগ্য কৃষির উন্নয়নই ছিল এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ভবিষ্যতে পাহাড়ি অঞ্চলে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাপনায় ইরি’র ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।

বাস্তবায়নাধীন নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে এগ্রিবিজনেস এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল  এর  প্রজেক্ট অফিসার , প্রদর্শনী জমির কৃষকগণ সহ সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এলাকার অন্যান্য কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন ।

নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে পাহাড়ি অঞ্চলে আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল ধান জাতের প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষককে আধুনিক জাতের ধান চাষে আগ্রহী করার জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জনপ্রিয়