
ভালো খাদ্য, উত্তম ভবিষ্যৎ: বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৫
প্রতিবছর ১৬ অক্টোবর পালিত বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৫ সালে গ্রহণ করেছে এক অনুপ্রেরণাদায়ী প্রতিপাদ্য ‘ভালো খাদ্য ও উত্তম ভবিষ্যতের জন্য হাতে হাত।’ এই প্রতিপাদ্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, শান্তিপূর্ণ, টেকসই ও সমৃদ্ধিশালী পৃথিবী গঠনে বৈশ্বিক সংহতি অপরিহার্য। খাদ্য নিরাপত্তা যেন সবার জন্য একটি যৌথ বাস্তবতা হয়ে ওঠে এটাই আমাদের লক্ষ্য। এটি সরকার, প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও সম্প্রদায়ের সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান জানায়, যাতে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরিত হয় এবং প্রত্যেক মানুষ পুষ্টিকর খাদ্যের সুযোগ পায়, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ পৃথিবী ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করতে পারি।
এ বছরটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-এর ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত আট দশক ধরে এই সংস্থাটি ক্ষুধা, অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, নীতি প্রণয়ন এবং টেকসই কৃষি উন্নয়নে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য আমাদের আহ্বান জানায় এখনই সময় যৌথ পদক্ষেপের। দৃঢ় ও ন্যায্য খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা কোনো একক খাতের দায়িত্ব নয় এটি দাবি করে দলগত প্রচেষ্টা, উদ্ভাবন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহার। শাখা-পেশা ও সীমান্ত অতিক্রম করে একসঙ্গে কাজ করলেই আমরা এমন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে পুষ্টিকর খাদ্য সবার নাগালে থাকবে এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
আজকের বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয় এবং খাদ্য বণ্টনে বৈষম্য। এসব আন্তঃসম্পর্কিত সংকট খাদ্য উৎপাদনের স্থিতিশীলতা ও মানব কল্যাণকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৫ একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে যেখানে সরকার, প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ ও ব্যক্তি হাতে হাত মিলিয়ে কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনের আহ্বান জানায়। এই রূপান্তরের কেন্দ্রে রয়েছে চারটি মূল উদ্যোগ :টেকসই ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি চর্চা, সরবরাহ শৃঙ্খলে খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি হ্রাস, স্থানীয় ও ক্ষুদ্র খাদ্য উৎপাদকদের ক্ষমতায়ন, নিরাপদ, পুষ্টিকর ও সাংস্কৃতিকভাবে উপযোগী খাদ্যে সবার ন্যায্য প্রবেশাধিকার
উদ্ভাবন গ্রহণ, সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং টেকসইতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা এমন খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি, যা মানুষ ও পৃথিবী উভয়কেই পুষ্টি জোগাবে আজ ও ভবিষ্যতে।
বিশ্ব খাদ্য দিবস কেবল আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নয়, এটি তৃণমূল পর্যায়েও পদক্ষেপের প্রেরণা জোগায়। নগর কৃষি, সম্প্রদায়ভিত্তিক খাদ্য কর্মসূচি এবং পুষ্টি শিক্ষা প্রচারণা এসব উদ্যোগ মানুষকে স্থানীয়ভাবে বাস্তব পরিবর্তন আনতে সক্ষম করে।
সহযোগিতার মনোভাব গ্রহণ করে এবং হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি, আজকের অগ্রগতি আগামী দিনের অধিক ন্যায়সংগত, টেকসই ও খাদ্যনিরাপদ সমাজের ভিত্তি হয়ে উঠবে। প্রতিটি অবদান যত ছোটই হোক না কেন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো এমন এক পৃথিবী গঠনে সহায়তা করে, যেখানে পুষ্টিকর খাদ্য সহজলভ্য, প্রতিবেশ ব্যবস্থা সুরক্ষিত এবং সম্প্রদায় প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমৃদ্ধিশালী হয়।
বিশ্ব খাদ্য দিবস কেবল প্রতীকী পালন নয় এটি একটি শক্তিশালী আহ্বান। এটি আমাদের অর্জন ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ দেয় এবং একই সঙ্গে দৃঢ়তা ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়। ক্ষুধা ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে সংগ্রাম একটি যৌথ বৈশ্বিক দায়িত্ব, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও অবিচল প্রতিশ্রুতি দাবি করে। আমরা যদি সহযোগিতা বৃদ্ধি, উদ্ভাবন গ্রহণ এবং ন্যায্যতাকে অগ্রাধিকার দেই, তবে এমন এক ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করতে পারি যেখানে প্রতিটি প্রজন্ম নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের সুযোগ পায় এবং পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করে।