ঢাকা   বুধবার ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

২২ বছর পর ভারতকে হারালো বাংলাদেশ

২২ বছর পর ভারতকে হারালো বাংলাদেশ

২২ বছর পর ভারতকে হারালো বাংলাদেশ

একটি জয়ের জন্য কত অপেক্ষা! ২২ বছর আগে হারানোর পর এক এক করে ১০ বার ভারতের মোকাবিলা করেও জয় পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। অবেশেষে সেই কাঙ্খিত জয়টি এলো এবং যে মাঠে ২০০৩ সালে ভারতকে শেষবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই মাঠেই। 

মঙ্গলবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে জিতেছে ভারতের বিপক্ষে।

১২ মিনিটে মোরসালিনের করা গোলটি বাকি সময় ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। সেই কৃতিত্ব সিংহভাগই হামজা চৌধুরীর অবদান। এক কথায় ম্যাচটি ছিল হামজাময়।

গত ২৫ মার্চ ভারতে অনুষ্ঠিত ম্যাচ ড্র করে এসছিল বাংলাদেশ। এবার ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে পাঁচ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ঝুলিতে তুললো।

এএফসি এশিয়া কাপ বাছাই পর্বের এই ম্যাচটি কোনোভাবেই বাংলাদেশ এবং ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ, আগেই এই দুই দল বাছাই পর্ব থেকে ছিটকে পড়েছে। তবে ঢাকা স্টেডিয়ামে বাংলাদশে এবং ভারত ম্যাচটি মর্যাদার লড়াই।

সেই মর্যাদার লড়াইয়ে অবশেষে জিতলো বাংলাদেশ। গত ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের সঙ্গে ড্র করে এসেছিল বাংলাদেশ। যেটা ছিল বাংলাদেশের জার্সিতে হামজা চৌধুরীর প্রথম ম্যাচ। কিন্তু এবার ঘরের মাঠে সেই ভারতকে পেয়ে হামজা চৌধুরা এবং সে সঙ্গে শামিত সোমরা মাঠ ছাড়লো জয়ের হাসি নিয়ে।

১২ মিনিটে মোরসালিনের গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও ভক্ত-সমর্থকদের শঙ্কা ছিল, শেষ মুহূর্তে না আবার গোল হজম করে বসে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা! কারণ, আগে গোল দিয়ে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে কত ম্যাচ যে জয় বঞ্চিত থাকতে হলো বাংলাদেশকে! যার সর্বশেষ উদাহরণ, চারদিন আগে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি। যেটাতে হামজার জোড়া গোল সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তের গোল ২-২ ব্যবধানে ড্র করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।

তবে, এবার আর সে শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি ভারতীয়রা। মোরসালিনের দেয়া গোলের পর নিজেদের রক্ষণ জমাটবদ্ধ রেখেই জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ।

ম্যাচের শুরু থেকে বাংলাদেশের পোস্ট লক্ষ্যে একের পর এক আক্রমণ সাজাচ্ছিল ভারত। কিন্তু ১২তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে দ্রুত গতিতে তিনজনকে কাটিয়ে ভারতের বক্সে ঢুকে যান রাকিব।

বাম দিক থেকে রাকিব যে ক্রসটি নেন তাতে দুর্দান্তভাবে কানেক্ট করেন মোরসালিন। ভারতীয় গোলরক্ষক এগিয়ে এসেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। গোল...। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে।

এরপর সমতায় ফিরতে মরিয়া ভারত অনেকবার চেষ্টা চালিয়েছে গোলের; কিন্তু হামজাদের ডিফেন্স এবং গোলরক্ষক মিতুল মারমার বাধা ভেদ করে তারা পারেনি গোল করতে। হামজা চৌধুরী গোললাইনে সেভ করেছেন বারবার। দুরপাল্লার শটে তার শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরেও গেছে একবার। রক্ষণে বারবার ত্রানকর্তার ভূমিকায় ছিলেন। আক্রমনে সহায়তাও করেছেন।

মাঠে উত্তেজনাও ছিল বেশ। জামাল ভূঁইয়া আগের দিন বলেছিলেন, এই ম্যাচে অনেক ঘটনা ঘটবে। ৩৩ মিনিটে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয়েছে। ফিলিপাইনের রেফারি বাংলাদেশের তপু বর্মণ ও ভারতের নারাভি নিখিলকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেছেন।

তার আগে ব্যাথা পেয়ে ২৭ মিনিটে মাঠ ছেড়েছেন তারিক কাজী। তার পরিবর্তে কোচ মাঠে নামিয়েছেন মোহামেডানের তরুণ ডিফেন্ডার শাকিল আহাদ তপুকে।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে গত ২৫ মার্চ শিলংয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল ইংলিশ লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর। ওই ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে হামজা পেলেন বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা ও আনন্দের জয়টি। বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম ম্যাচ খেললেন হামজা চৌধুরী। ম্যাচটি তার জন্য লাকি সেভেনই থাকলো। এ ম্যাচেও হামজা ছিল অনন্য। একটি গোলও পেতে পারতেন। বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া শট অল্পের জন্য চলে যায় পোষ্ট ঘেঁষে।

গত দুটি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে জয় ছিল না বাংলাদেশের। এরপর চলমান আসরে চার ম্যাচ গোলশূন্য। অবেশেষ বাংলাদেশ পেলো ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় এবং এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়।

মিতুল মারমা, তপু বর্মণ, তারিক কাজী (শাকিল আহাদ তপু), সাদ উদ্দিন জায়ান আহমেদ (তাজ উদ্দিন), হামজা চৌধুরী, সোহেল রানা, শামিত সোম, রাকিব হোসেন, শেখ মোরসালিন (শাহরিয়ার ইমন) ও ফয়সাল আহেমদ ফাহিম।