
কঠোর মুদ্রানীতির ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কঠোর মুদ্রানীতির ধারা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে কঠোর মুদ্রানীতির ধারা অব্যাহত রাখবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সময় তিনি এ কথা বলেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যদি মূল্যস্ফীতির হার আরও কমতে থাকে, তাহলে পলিসি রেপো রেট নিম্নমুখী হতে পারে। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে না আসা পর্যন্ত পলিসি রেপো রেট ১০.০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।
গভর্নর বলেন, স্টান্ডিং ল্যান্ডিং ফেসিলিটি (এসএলএফ) হার ১১.৫ শতাংশে থাকবে এবং স্টান্ডিং ডিপোজিট ফেসিলিটি (এসডিএফ) হার ৮.০ শতাংশ থাকবে।
আহসান এইচ মনসুর তার বক্তব্যে বলেন, এই মুদ্রানীতি বিবৃতির (এমপিএস) প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার আরও হ্রাস করা, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করা।
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও নীতিগত অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধি ও এর সাথে সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা রপ্তানির জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং আর্থিক বাজারের অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, চাহিদা হ্রাস, মুদ্রার অস্থিরতা এবং হাইড্রোকার্বনের দাম হ্রাসের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দুর্বল প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে সুদের হার কমাতে বা বর্তমান নিম্ন স্তরে স্থির রাখতে আগ্রহী হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম হ্রাস পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মনসুর বলেন, ‘২০২৪ সালের আগস্টে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ছিল ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অবমূল্যায়িত বিনিময় হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, বৈদেশিক অর্থপ্রদানের বকেয়া বৃদ্ধি, কঠোর তারল্য অবস্থা, সুশাসনের অভাব এবং উচ্চ পরিমাণে নন-পারফরমিং লোন (এনপিএল)।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সুস্পষ্ট ও ভবিষ্যতমুখী কৌশল নির্ধারণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতির অবস্থান বজায় রেখেছে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতকে লক্ষ্য করে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরোপুরি নমনীয় বিনিময় হার বাস্তবায়নের উদ্যোগ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা ও সুশাসন ধীরে ধীরে ফিরে আসছে, আমানতকারীদের আস্থা ফিরেছে এবং তারল্য পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়েছে।'
বিনিময় হার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়েছে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যায়।’
তিনি বলেন, ‘এই নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থা বৈদেশিক ভারসাম্যহীনতা সহজে সামলাতে, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাপ কমাতে এবং রিজার্ভ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রপ্তানির চাহিদা হ্রাস এবং বাড়তি শুল্কের প্রভাবে সৃষ্ট নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই বিনিময় হার নমনীয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পদক্ষেপ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন দুইবার একটি রেফারেন্স এক্সচেঞ্জ রেট প্রকাশ করে, যা বাজারে মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে।’