কুমিল্লায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচ, লড়াইটা হবে বসুন্ধরা কিংস ও ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। বলছি ২০২০ সালের মার্চ মাসের কথা। শহর জুড়ে মানুষের মাঝে এই ম্যাচ ঘিরে তুমুল আগ্রহ গড়ে উঠেছে তখন।
ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে রবিবার (৮ মার্চ) তবে তখন দলগুলোর অনুশীলন দেখতেও মাঠে যেত লেখক। কিংস হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে দিনটি ছিল শুক্রবার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ জামে মসজিদের ছাদে সবাই জুমার নামাজ আদায় করল। ভাগ্যক্রমে সবার সাথে খেলোয়াড়েরাও নামাজ আদায় করেছিল।
তবে তীব্র রোদটুকু সহ্য হচ্ছিল না তারিক কাজীর। তখন মিনহাজ ভাই ব্যাগ থেকে একটা টি শার্ট নিয়ে তারিকের মাথায় দিয়ে দিলো। কিংস একাদশে তখনও জায়গা হচ্ছিল না তারিকের। বাংলাদেশ ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আসা ছেলেটা তখন কিছুটা উপেক্ষিতও হয়েছিলেন।
নামাজ শেষ করে হোটেল এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন আনিসুর জিকো সহ আরও দু’একজনের সাথে। লেখক হুট করে মজার ছলে তারিক কে জিগ্যেস করেছিল ‘আপনার তো এখনও আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে, টিকতে পারবেন তো এই রোদ-বৃষ্টির দেশে?’ তারিকও সে কথায় হেসে জবাব দিয়েছিলো, ‘টিকতে না পারলে তোমরা তো আছোই, রোদ বৃষ্টির সময় মাথায় টি শার্ট দিয়ে দিতে।’ একসাথে সবাই হেসে উঠেছিল।
যে নক্ষত্র ফ্যালফ্যাল করে আলো ছড়াতে চাচ্ছে, কালো আঁধার কতদিনই বা তাকে ঢেকে রাখতে পারে? উজ্জ্বল নক্ষত্র তো সব আঁধার দূর করে জ্বলে উঠবেই। যেমনটা তারিক কাজী। তার জন্ম অবশ্য ফিনল্যান্ডে। ফুটবলের হাতে খড়িটা ওই ফুটবল জনপ্রিয় দেশটিতেই। ফিনল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন তিনি। ক্লাব পর্যায়ে ফিনল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্লাব ইলভেস টেম্পেরের হয়ে খেলতেন তারিক।
২০১৯ সালেও যে ক্লাবটি ফিনিশ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ক্লাবটি নিয়মিতই খেলে থাকে ইউরোপা লিগে। ইলভেস টেম্পেরের হয়ে তারিক নিজেও ইউরোপা লিগের বাছাই পর্ব খেলেছেন।যেভাবে এগুচ্ছিলেন তাতে ফিনল্যান্ডের জাতীয় দলের জার্সিও গায়ে জড়ানো টাও ছিল কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার।
চাকচিক্যময় জীবন, অর্থের ঝনকানি— সবই ছিল তারিকের নাগালের মধ্যেই। সেই তারিকই কি না সবকিছু ছেড়েছুড়ে বাংলাদেশে এসেছেন এ দেশের ফুটবলার হবেন বলে। তাকে কি আর বেশিদিন আড়াল রাখা যায়?
তারিক ছুটে এসেছেন পিতৃভূমির টানে। তারিকের মা ফিনল্যান্ডের নাগরিক, কাজ করেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে। আর তারিকের বাবা কাজী শহিদুল আালমের বাড়ি নওগাঁয়।এই মুহূর্তে ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পেরে শহরের ‘ট্যাম্পের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করছেন। বাবার মুখে নিয়মিত শুনেছেন লাল-সবুজ এই দেশের কথা। তাতেই স্বপ্ন বুনেন। সেই স্বপ্ন মাফিক ই এদেশে ছুটে এসেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে তারিকের অভিষেক টা হয় এই বছরের জুন মাসে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন তারিক কাজী। এরপর থেকে দলে নিয়মিতই আছেন তারিক কাজী। আর ক্লাব ফুটবলে তারিক কাজী মাঠ মাতাচ্ছেন বসুন্ধরা কিংসের হয়ে।
এভাবেই লাল-সবুজ জার্সি গায়ে আলো ছড়াবেন তারিক....রোদ-বৃষ্টি হোক আর যাই হোক আমরা তো রয়েছি ই টি শার্ট মাথায় দিতে।
©পোষ্ট- মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ভাই।